ঢাকা থেকে সহজেই ঘুরে আসুন মুন্সীগঞ্জের এই ৫ স্থান

আসিয়া আফরিন চৌধুরী
আসিয়া আফরিন চৌধুরী
17 November 2023, 12:00 PM
UPDATED 17 November 2023, 18:35 PM
প্রাচীনকালে এই জেলাতে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন স্থাপনা, যার কিছু ধ্বংসাবশেষ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এখনও। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্যও মুন্সীগঞ্জে আছে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা। 

কর্মব্যস্ত জীবনকে ছুটি দিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে চাচ্ছেন, কিন্তু হাতে সময় কম? তাহলে ঢাকার অদূরে মুন্সীগঞ্জ থেকে ঘুরে আসতে পারেন। প্রাচীনকালে এই জেলাতে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন স্থাপনা, যার কিছু ধ্বংসাবশেষ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এখনও। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্যও মুন্সীগঞ্জে আছে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা। 

জেনে নিন তাহলে মুন্সীগঞ্জের দারুণ পাঁচটি ভ্রমণের স্থানের খোঁজ-

আড়িয়াল বিল
আড়িয়াল বিলের নীলচে পানিতে স্পষ্ট হওয়া সাদা মেঘের প্রতিবিম্ব দেখে যে কেউ মায়াবী জগতের ভাবনায় ডুবে যেতে পারবেন। টলটলে পানির মাঝে মাথাচাড়া দেয় হাজারও শাপলা ফুল। আকাশজুড়ে সাদা মেঘের সঙ্গে সমান্তরালে উড়ে বেড়ায় অসংখ্য সাদা সাদা বক। আড়িয়াল বিল মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় অবস্থিত। বর্ষায় এই জলাভূমি নয়নাভিরাম রূপধারণ করে। শুষ্ক মৌসুমে এখানে ভুট্টা, শাকসবজি চাষ হয় আর বর্ষায় স্থানীয় মাছের চাহিদা পূরণ করে এই বিল।

flags_wb.jpg
ছবি: খায়রুল আলম সবুজ

বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবারের সঙ্গে আড়িয়াল বিল ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন। ঢাকার গুলিস্তান থেকে শ্রীনগর পৌঁছতে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।সেখান থেকে বড় নৌকা ভাড়া নিয়ে সারাদিন পানিতে ভেসে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন।

মাওয়া ঘাট

Lalmonirhat teesta bank Aug 14 20.jpg
ছবি: সংগৃহীত

যদি পদ্মার তাজা ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছে থাকে তবে অন্তত এক দিনের জন্য সকালের কাঁচা ঘুম ত্যাগ করে মাওয়া পৌঁছাতে হবে সকাল ৯টার মধ্যে। ঘাটে টাটকা ইলিশ খেতে গেলে জেলেদের থেকে কয়েকজন মিলে একটি আস্ত ইলিশ কিনে নিয়ে তারপর ভেজে দিতে বলুন। আশেপাশে অনেক দোকান আছে যেগুলো মোটামুটি ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে। সরিষার তেলে ইলিশ মাছ ভাজা, আর লেজ আর মাথা দিয়ে ইলিশের লেজ ভর্তা, সঙ্গে ইলিশের তেলে ভাজা বেগুন- একজন ভোজন রসিকের এরচেয়ে বেশি কী লাগে!

পদ্মার বিশাল জলরাশির উন্মাদনাও উপভোগ করা যাবে সেখানে। উত্তাল পদ্মা নৌকা দিয়ে ঘুরতে পারবেন না ঠিক, তবে চাইলে ফেরিতে এপার ওপার ঘুরতে পারেন। দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত নদীতে থাকে সূর্যের রূপালি ঝিলিক। ফেরিতে বসে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সহজেই।
ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাটের দূরত্ব মাত্র ৩৬ কিলোমিটার। লং ড্রাইভে চলে যেতে পারেন মাওয়া ঘাট। এ ছাড়া এই জায়গাটিতে যাওয়ার গণপরিবহনও পাওয়া যায়। যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে পাবলিক বাসে যেতে পারেন। সেখান থেকে মাওয়া ঘাটে পৌঁছাতে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে।

ইদ্রাকপুর দুর্গ
 ইদ্রাকপুর কেল্লা মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত একটি মোঘল স্থাপত্য। বাংলার সুবাদার ও সেনাপতি মীর জুমলা বর্তমান মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরে তৎকালীন ইছামতি নদীর পশ্চিম তীরে ইদ্রাকপুর নামক স্থানে এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। কালের পরিক্রমায় সেই ইছামতীর গতিপথ পাল্টে গেছে। তবে দুর্গটির এক থেকে তিন কিলোমিটারের মধ্যে ধলেশ্বরী, মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদী এখনও বহমান।


জনশ্রুতি আছে, এই দুর্গের সুরঙ্গপথ দিয়ে ঢাকার লালবাগ দুর্গের যোগাযোগ ছিল। ধারণা করা হয়, এ দুর্গকে ঘিরেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠে মুন্সীগঞ্জের বসতি। প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে আগ্রহ থাকলে, নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ইদ্রাকপুর দুর্গ।

গুলিস্তান থেকে গণপরিবহনে করে মুন্সীগঞ্জ জজকোর্টের বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে।সেখান থেকে ইদ্রাকপুর দুর্গ মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে।

অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান
মুন্সীগঞ্জ জেলার অদূরে বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে পাল সাম্রাজ্যের বিখ্যাত বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারক পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর জন্মগ্রহণ করেন। গুলিস্তান থেকে বিআরটিসি বাসসহ অন্যান্য আরও অনেক গণপরিবহন রয়েছে অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থানে যাওয়ার জন্য।

বাবা আদম মসজিদ

Lebanon1.jpg
বাবা আদম মসজিদের ভেতরের অংশ। ছবি:খায়রুল আলম সবুজ

পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত বাবা আদম মসজিদ মুন্সীগঞ্জ জেলার কসবা গ্রামে অবস্থিত।মসজিদটি সুলতান জালালুদ্দিন ফতেহ শাহের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল। মুসলিম ধর্ম প্রচারক বাবা আদম শহীদের সমাধি এই মসজিদের চত্বরে স্থাপিত রয়েছে। প্রাচীন এই মসজিদ মুসলিম স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য নিদর্শন, যা দর্শনার্থীদের মধ্যে কৌতূহল জাগিয়ে তোলে। 
ঢাকা থেকে ব্যক্তিগত পরিবহন কিংবা গণপরিবহনে গিয়ে মসজিদ পরিদর্শন করতে পারেন। তাছাড়া, বাবা আদম মসজিদে জলপথেও যাওয়া যায়। সদরঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের লঞ্চে উঠে দুই ঘণ্টার মধ্যে আপনি মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছাতে পারবেন।