ঘুরে আসুন দেশের দৃষ্টিনন্দন ৫ দ্বীপ

By পূজা সরকার
27 April 2023, 15:11 PM
UPDATED 27 April 2023, 22:17 PM
প্রতিটি দ্বীপই যেন নিজ মোহজালে আমাদের কাছে টানে।

ভ্রমণের জন্য দ্বীপের মতো চমৎকার জায়গা খুব কমই আছে। মূলভূমি থেকে দূরে চারদিক কেবলই পানিতে ঘেরা একেকটি দ্বীপ প্রাণ, প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার স্বকীয়তায় অনন্য। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর শ্বাসরুদ্ধকর মনোরম দৃশ্যে ভরপুর প্রতিটি দ্বীপই যেন নিজ মোহজালে আমাদের কাছে টানে।

চলুন জানি বাংলাদেশের কিছু দ্বীপের কথা, যেখানে ভ্রমণপিপাসুরা একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য এক স্বর্গরাজ্য। কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত সেন্ট মার্টিন তার অবিরাম নীল আকাশ, স্বচ্ছ নীল জল এবং দৃষ্টিনন্দন নারকেল গাছের সারি সাজিয়ে অপেক্ষায় পর্যটকদের জন্য।

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন-বান্ধব এই দ্বীপ প্রতি নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সেন্টমার্টিন যেতে প্রথমে পৌঁছাতে হবে সর্বদক্ষিণের উপজেলা টেকনাফে। এরপর টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার জন্য রয়েছে প্রতিদিন সকালবেলা ছেড়ে যাওয়া জাহাজ।

capture_1.jpg
ছবি: মাসুদুর রহমান

ছেঁড়া দ্বীপ

২০০০ সালের দিকে আবিষ্কৃত ছেঁড়া দ্বীপ নামে দ্বীপ হলেও এটি আসলে দ্বীপপুঞ্জ। বেশ কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জ স্থানীয়দের কাছে 'ছেঁড়াদিয়া' বা 'সিরাদিয়া' নামেও পরিচিত।

সেন্ট মার্টিনের মূল ভূখণ্ড থেকে দক্ষিণে অবস্থিত দ্বীপটি সেন্ট মার্টিনে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।

নারকেল গাছ, প্রাকৃতিক পাথর এবং প্রবালের এই দ্বীপ মুগ্ধ করে সবাইকে। জোয়ারের সময় দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে তলিয়ে গেলেও, পর্যটকরা পাথরের উপর সমুদ্রের নীল ঢেউ আছড়ে পড়ার অত্যাশ্চর্য দৃশ্য উপভোগ করতে পারে। স্বচ্ছ নীল সমুদ্র, খোলা আকাশ এবং মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্ত ছেঁড়া দ্বীপে বিপুল সংখ্যক পর্যটককে কাছে টেনে নেয়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে ট্রলারে করে কিংবা ভাটার সময় সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় ছেঁড়া দ্বীপে।

capture_2.jpg
ছবি: সাইফ আল ইমন

মহেশখালী

কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে অবস্থিত দ্বীপ মহেশখালী। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। বলা হয়, ১৫৫৯ সালে এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হয়েছিল দ্বীপটি। প্রায় ২০০ বছর আগে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুর সম্মানে এর নাম দেওয়া হয়েছিল মহেশ্বর।

মহেশখালী উপজেলায় বেশ কতগুলো ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে (যেমন- সোনাদিয়া), যেগুলোয় কক্সবাজার সদর হয়ে যাওয়া যায়। এলাকাটি পান, মাছ, শুঁটকি, চিংড়ি, লবণ ও মুক্তা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

মহেশখালীতে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হলো মৈনাক পাহাড়ে অবস্থিত আদিনাথ মন্দির। প্রতি ফাল্গুনে অগণিত দর্শনার্থী আদিনাথ উৎসবের জন্য এই দ্বীপে আসেন। আদিনাথ মন্দির, ম্যানগ্রোভ বন আর পাহাড় মিলে এমন দৃশ্য সৃষ্টি হয়, যা অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর। গোল্ডেন টেম্পলের মতো জায়গাগুলোর সঙ্গে দ্বীপটি শুধু একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান নয়, ঐতিহ্য এবং আধ্যাত্মিকতায় ভরা একটি অঞ্চলও বটে।

২টি ভিন্ন পথে মহেশখালী যাওয়া যায়। কক্সবাজার থেকে সরাসরি স্পিডবোট বা ট্রলারে করে কিংবা চট্টগ্রাম থেকে সড়কপথে চকরিয়া এসে বাধারখালী হয়ে পৌঁছাতে পারবেন মহেশখালী।

কুতুবদিয়া

কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত আরেকটি দ্বীপ কুতুবদিয়া। ২১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপটির পরিবেশ অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এখানে বাংলাদেশের বৃহত্তম উইন্ড পাওয়ার প্ল্যান্টও রয়েছে। সমুদ্র সৈকত, কুতুবদিয়া চ্যানেল, লবণাক্ত জলাভূমি, বাতিঘর এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার; এসব নিয়ে দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের এক দারুণ জায়গা হয়ে উঠেছে।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল সিএনজিতে করে প্রথমে যেতে হবে মগনামা ঘাটে। সেখান থেকে ইঞ্জিন নৌকা বা স্পিডবোটে খুব অল্প সময়েই পৌঁছে যেতে পারবেন কুতুবদিয়া দ্বীপে।

হাতিয়া

বঙ্গোপসাগরের উত্তরে মেঘনা নদীর মোহনায় উপকূল থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্বীপ হাতিয়া। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী জেলায় অবস্থিত। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে দ্বীপটি আবিষ্কৃত হয়েছিল, যার উত্তর ও পশ্চিম দিকে প্রবাহিত মেঘনা নদী, আর পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর।

নিঝুম দ্বীপ, রহমত বাজার ঘাট, সূর্যমুখী সমুদ্র সৈকত, আইল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি পার্ক, শিপবোর্ড এবং ডোমার চর পর্যটকদের জন্য হাতিয়ার কয়েকটি আকর্ষণীয় স্থান। এ ছাড়া হাতিয়ার দই বেশ জনপ্রিয়।

দর্শনার্থীরা নোয়াখালী থেকে বাস বা সিএনজি করে চেয়ারম্যান ঘাটে যেতে পারেন এবং তারপর নৌকা বা লঞ্চে করে পৌঁছাতে পারেন এই দ্বীপে।

এই হলো বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দ্বীপ, যেগুলোয় আপনি চাইলে একা, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে দিতে পারবেন এক প্রাণবন্ত ট্যুর। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ঘুরে দেখার জায়গা আর স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রা- সব মিলিয়ে প্রতিটি দ্বীপই আপনাকে দিতে পারে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

অনুবাদ: আনজিলা জেরিন আনজুম