ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্টের ২৭ বছরের কারাদণ্ড

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
12 September 2025, 04:00 AM
UPDATED 12 September 2025, 10:29 AM
২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থি প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যাওয়ার পরও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিলেন বলসোনারো—এমন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট।

সামরিক অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারো। এই অপরাধে তাকে ২৭ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ শুক্রবার যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।

দেশটির সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত প্যানেল এই রায়ের ঘোষণা দেয়। 

২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থি প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যাওয়ার পরও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিলেন বলসোনারো—এমন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট।

প্যানেলের চার বিচারক তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এক বিচারক তাকে খালাস দেওয়ার পক্ষে মত দেন। বলসোনারোর আইনজীবীরা এই রায়কে 'অস্বাভাবিক মাত্রার' শাস্তি বলে আখ্যা দেন এবং জানান, তারা এর বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

Brazil
বলসোনারোর কারাদণ্ডের রায় প্রকাশের পর উৎসবে মেতে ওঠেন ব্রাজিলীয়রা। ছবি: এএফপি

রায়ের অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট বলসোনারোকে ২০৩৩ পর্যন্ত কোনো সরকারি পদে নির্বাচন করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সাম্প্রতিক বলসোনারোকে দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি তার নিজের বাসায় হাউস অ্যারেস্টে আছেন।

এমন কী, তার বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচারিক কার্যক্রমের শেষ পর্যায়ে তিনি সশরীরেও উপস্থিত থাকেননি।

তবে তিনি এর আগে অভিযোগ করেছেন, ২০২৬ সালের নির্বাচনে যাতে লড়তে না পারেন, সেটা নিশ্চিতেই এসব উদ্যোগ।

তিনি তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগকে মিথ্যা বলে দাবি করেন এবং বলেন, তাকে হেনস্তা করতে 'আলেয়ার পিছে' ছুটছে তার প্রতিপক্ষরা।

বলসোনারোর বন্ধু ও মিত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিষয়টিতে একমত। ব্রাজিলের পণ্য আমদানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে তিনি 'বলসোনারোর ওপর চালানো নির্যাতনের' প্রতিশোধ বলে অভিহিত করেন ।

বলসোনারোর বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, তিনি এতে 'অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছেন।'

'আমার সঙ্গে যা করার চেষ্টা হয়েছিল, এখানেও সেরকমটাই দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু তারা এটা করে পার পায়নি', যোগ করেন তিনি।  

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মন্তব্য করেন, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট 'অন্যায্যভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোকে কারাবন্দী করে রাখার রায় দিয়েছে।'

তিনি এই 'আলেয়ার পিছে ছোটার উদ্যোগে যথাযথ প্রতিক্রিয়া' দেখানোর হুমকি দেন।

রুবিওর মন্তব্যের তাৎক্ষণিক জবাব দিয়ে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামাজিক মাধ্যম এক্সে বলেন, 'মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর দেওয়া আজকের বিবৃতি ব্রাজিলের কর্তৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার শামিল। এটি প্রকৃত সত্য ও অকাট্য প্রমাণকে অবজ্ঞা করে দেওয়া বক্তব্য। এ ধরনের হুমকি আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ভয় দেখাতে পারবে না।'

বলসোনারো (৭০) সম্ভবত তার জীবনের বাকি সময়টুকু কারাগারেই কাটাবেন—এমন মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

lulaa_daa_silbhaa.jpg
লুলা দা সিলভা। ছবি: রয়টার্স

তার আইনজীবীরা শাস্তি কমানো ও তাকে কারাগারের বদলে নিজের বাসায় অন্তরীণ রাখার আবেদন জানাবেন বলে জানা গেছে।

ওই শাস্তি প্রত্যাহারের জন্য আপিল করা হলেও তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এমনটাই মত দিয়েছেন দেশটির আইন বিশেষজ্ঞরা। যদি বিচারক প্যানেলে পাঁচজনের মধ্যে দুইজন তাকে নির্দোষ মনে করেন, শুধু সে ক্ষেত্রেই শাস্তি বাতিল হবে। 

বলসোনারোর বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে। পাঁচটিই ২০২২ সালের নির্বাচনের পর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার বিভিন্ন উদ্যোগ-সংশ্লিষ্ট।

তবে কৌসুলিরা যুক্তি দেন, দীর্ঘ সময় আগে থেকেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা ধরে রাখার চক্রান্ত শুরু করেন। তিনি সামরিক কমান্ডারদেরকে ক্যু করার প্রস্তাব দেন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরির চেষ্টা করেন।

তদন্তে জানা গেছে, বলসোনারো বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা, ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে হত্যার সম্ভাব্য পরিকল্পনার বিষয়ে জানতেন।

তদন্তে প্রকাশ, বলসোনারো নিজেই এই ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেন এবং তার সঙ্গে আরও সাতজন সহযোগী ছিলেন। তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা, দুই সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী, একজন সাবেক গোয়েন্দা প্রধান ও সাবেক নিরাপত্তা মন্ত্রীও আছেন। ওই সহযোগীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

তবে ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে যথেষ্ট সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হন বলসোনারো ও তার সহযোগীরা।

তবে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি সরকারি ভবনে বলসোনারোর সমর্থকরা হামলা চালায়।

সে সময় দেড় হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়।