তৃতীয় প্রান্তিকে ৬০ শতাংশ বাজেট ব্যয় না হলে এরপর বরাদ্দ বন্ধ, অর্থ বিভাগের হুঁশিয়ারি

রেজাউল করিম বায়রন
রেজাউল করিম বায়রন
11 September 2025, 07:40 AM
UPDATED 11 September 2025, 16:18 PM
অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে গিয়ে বাজেট খরচের হুড়োহুড়ি রোধে এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে বাজেট বরাদ্দের ৬০ শতাংশের কম খরচ হলে চতুর্থ প্রান্তিকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

গতকাল বুধবার অর্থ বিভাগের এক পরিপত্রে জানানো হয়েছে, অর্থবছরের শেষ মুহূর্তে গিয়ে বাজেট খরচের হুড়োহুড়ি রোধে এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেননা, শেষ সময়ে খরচ করতে গিয়ে প্রায়শই সরকারি অর্থের অপব্যবহার করা হয়।

সরকারি সংস্থাগুলো তৃতীয় প্রান্তিকের মধ্যে নির্ধারিত কোটা পূরণে ব্যর্থ হলে, চতুর্থ কিস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আটকে দেওয়া হবে বলে পরিপত্রে সতর্ক করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে—অর্থবছরের শুরুতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর বাজেট বাস্তবায়ন গতি খুবই কম থাকে। কিন্তু, শেষ প্রান্তিকে খরচ বেড়ে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে, অর্থবছরের শেষ দিকে প্রকৃত চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখেই দ্রুত বরাদ্দের অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রায়শই সঠিক প্রক্রিয়া না মেনে অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা হয়। এতে সীমিত সরকারি সম্পদের অপব্যবহার, অপচয় ও অনিয়ম হয় এবং সরকারি ব্যয়ের মান ক্ষুণ্ণ করে।

এমনকি এর ফলে সরকারকে বছরের শেষে অপ্রত্যাশিত ঋণ নিতে বাধ্য হতে হয়, যা আর্থিক শৃঙ্খলাকেও দুর্বল করে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, অনুমোদিত বাজেটের সময়োপযোগী ও যথাযথ বাস্তবায়ন অপ্রত্যাশিত ঋণ এড়াতে সাহায্য করবে এবং সরকারি ঋণের চাপ কমাবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বারবার নির্দেশনা দেওয়া সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে খরচ হয়েছে মাত্র ৯৬ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা—যা বরাদ্দের মাত্র ১২.৪৭ শতাংশ। উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে চিত্র আরও হতাশাজনক। প্রথম তিন মাসে বরাদ্দের মাত্র ৩.৭৫ শতাংশ খরচ হয়েছিল।

পরে খরচের গতি বাড়ে—১১ মাসে ব্যয় দাঁড়ায় ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৪৫ কোটি টাকায়।

মূল বরাদ্দ পরে কমিয়ে ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা করা হয়। সংশোধিত লক্ষ্য পূরণে শুধু শেষ মাসেই খরচ করতে হতো ২ লাখ ৫১ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা, যেখানে আগের ১১ মাসে গড়ে মাসিক ব্যয় ছিল ৪৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা।

শেষ মাসের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

চলতি অর্থবছরে একই প্রবণতা এড়াতে অর্থ বিভাগ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। যেমন: প্রথম প্রান্তিকের বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নির্ধারিত সিস্টেম বা মেন্যুতে প্রবেশ না করালে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করা হবে না। মন্ত্রণালয়গুলোকে আরও নয়টি নির্দেশনা মানতে হবে।

এ ছাড়া, সব মন্ত্রণালয়কে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা জমা দিতে এবং প্রতিটি প্রান্তিক শেষে এক মাসের মধ্যে ত্রৈমাসিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।