নির্বাচিত হলে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে জাকসুর তফসিল-নির্বাচনের তারিখ অন্তর্ভুক্ত করব: শরণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচনের তারিখ অন্তর্ভুক্ত করতে চান বামপন্থী সংগঠন সমর্থিত 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মো. শরণ এহসান।
'আমি মনে করি, গণতন্ত্রের এই ধারা যদি অব্যাহত রাখতে হয়, অবশ্যই একাডেমিক ক্যালেন্ডারে জাকসুর তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচনের তারিখ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে জাকসু নিয়ে এক ধরনের নিশ্চয়তা তৈরি হবে,' সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, 'আমার শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। তাদের মত, ৫ আগস্টের আগে যেমন ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের প্রতি বিশ্বাসহীনতা ছিল, পরবর্তী সময়ে অনেক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস ধরে রাখতে পারেনি। আমরা যারা সংস্কৃতিকর্মী আছি, তাদের প্রতি কিন্তু সব সময় এক ধরনের আস্থার জায়গা ছিল।'
শিক্ষার্থীদের অধিকারের দাবি নিয়ে আমরা বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে গেছি। কর্তৃপক্ষ কখনো আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে, কখনো পারেনি। যেহেতু আমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এবং লড়াইয়ের ইতিহাস আছে; সেটা কালচারাল পলিটিক্যাল হোক বা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে—সেই জায়গা থেকে জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। 'শিক্ষার্থীরা অবশ্যই আমার ওপর ভরসা রাখবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে আমার প্যানেল তৈরি করার চেষ্টা করেছি,' বলেন শরণ।
নির্বাচনী ইশতেহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকেই ছোট বা ক্ষুদ্র সমস্যা সমাধানের কথা বলছেন। আমি অনেকগুলো ছোট সমস্যাকে বৃহৎ আকারে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। যেমন বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস রুম সংকট, ল্যাব সংকট, বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ পরিবহন সংকট, শিক্ষার্থীরা কোথায় খাবে কিংবা তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে—এগুলো সমাধানে আমি মনে করি স্ট্রাকচারাল মাস্টার প্ল্যান দরকার। এছাড়া, শিক্ষা-গবেষণার মানোন্নয়নের মতো বিষয়কে আমরা একাডেমিক মাস্টার প্ল্যানের আওতায় নিয়ে সমাধান করতে চাই।
শরণ বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকে দেখেছি বিভিন্ন সময় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা জাকসুর দাবিতে গানের মিছিল আয়োজন করেছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। সেটা নানা কারণে সম্ভব না হলেও ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং ৩৩ বছর পর জাকসু অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
'জাকসু হচ্ছে এমন এক সময়, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৪টি বিভাগে পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা এবং একাডেমিক নানা জটিলতায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটু অনুৎসাহ আমরা দেখতে পাচ্ছি' উল্লেখ করে তিনি বলেন, একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা অবগত থাকবে, ক্লাস-পরীক্ষা পরিকল্পিতভাবে সাজানো হবে—চাপ থাকবে না এবং উৎসবমুখর পরিবেশে জাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করা যাবে।
নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে শরণ বলেন, 'নির্বাচন কমিশন এমন আচরণবিধি বেঁধে দিয়েছে যে, শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো প্রার্থীদের জন্য সংকটের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই দেখতে পাচ্ছি নির্বাচনের আচরণবিধি ভাঙছেন, অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আচরণবিধি ভাঙলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই বিষয়টিও আসলে স্পষ্ট নয়। এটা নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসনের এক ধরনের স্বচ্ছতা-নিরপেক্ষতার অভাব হিসেবেই আমরা দেখছি।'
Comments