‘নজিরবিহীন মাত্রায়’ পৌঁছেছে চীন-রাশিয়া সম্পর্ক

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
2 September 2025, 06:04 AM
যুদ্ধকালীন সময়ে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করে পুতিন বলেন, ‘আমরা আগেও একে অপরের পাশে ছিলাম, এখনো আছি।’

নজিরবিহীন এক ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি তার 'বন্ধু' চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে বলেছেন, মস্কো-বেইজিং সম্পর্কের গভীরতা 'নজিরবিহীন মাত্রায়' পৌঁছে গেছে।

আজ মঙ্গলবার পুতিনের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামীকাল বুধবার বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এক সুবিশাল সামরিক মহড়া।

ওই মহড়ায় অতিথি হিসেবে যোগ দিতে চীনে এসেছেন উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন ও পুতিনসহ আরও বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা।

China Russia Meeting
চীন-রাশিয়া বৈঠক। ছবি: এএফপি

পুতিন-শি'র বৈঠকের কিছুটা অংশ লাইভে প্রচার করা হয়। এ সময় পুতিন বলেন, 'আমাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগে রাশিয়া-চীন সম্পর্কের কৌশলগত প্রকৃতির প্রতিফলন ঘটেছে, যা এখন নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছে গেছে।'

যুদ্ধকালীন সময়ে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ইতিহাসের প্রতি ইঙ্গিত করে পুতিন বলেন, 'আমরা আগেও একে অপরের পাশে ছিলাম, এখনো আছি।'

এর আগে পুতিন-শি উভয়ই চীনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে সাংহাই সহযোগিতা সংগঠনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এসসিও বিশ্ব মঞ্চে পশ্চিমা দেশগুলোর আধিপত্যের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম এবং এটি একটি সমীহ জাগানিয়া জোট।

সম্মেলনে পুতিন-শি উভয়ই ভিন্ন ভিন্ন কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেন।

শি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে বিশ্ব মঞ্চে কয়েকটি দেশের 'মোড়লসুলভ আচরণের' প্রতি তীব্র নিন্দা জানান।

অপরদিকে পুতিন দাবি করেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর জন্য পশ্চিমা দেশগুলোই দায়ী।

আজ মঙ্গলবার শি, পুতিনকে বলেন, 'চীন-রাশিয়া সম্পর্ক সদা-পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক মঞ্চের পরীক্ষায় পাস করেছে।'

তিনি আরও জানান, 'বৈশ্বিক সুশাসন প্রক্রিয়াকে আরও ন্যায্য ও যৌক্তিক করে তুলতে' মস্কোর সঙ্গে বেইজিং কাজ করে যেতে আগ্রহী।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরুর অল্প কয়েকদিন আগে মস্কো-বেইজিংয়ের যৌথ ঘোষণায় জানানো হয়, 'দুই দেশের অংশীদারিত্বের কোন সীমা নেই'। এরপর থেকে পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিলেও মস্কোর সঙ্গে বেইজিংয়ের বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।

চীন কখনোই রুশ আগ্রাসনের প্রতি নিন্দা জানায়নি বা পুতিনকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়নি।

ইউক্রেনের মিত্রদের বিশ্বাস, মস্কোকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে বেইজিং।

তবে চীন এই সংঘাতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দাবি করেছে। নিয়মিত দেশটি উভয় পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনের আহ্বান জানিয়ে এসেছে।

তবে একইসঙ্গে চীন এটাও দাবি করেছে যে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের হাতে বারবার অস্ত্র তুলে দিয়ে এই সংঘাতকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

শি-পুতিন নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। গত মাসে দুই নেতা ফোনে কথা বলেছেন। শি মন্তব্য করেন, মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্কের বরফ গলতে দেখে তিনি সন্তুষ্ট।

China Russia meeting
চীন-রাশিয়া বৈঠক। ছবি: এএফপি

৯ মে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীকে পরাজিত করার ৮০তম বার্ষিকী উদযাপন করে রাশিয়া। ঐ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত মে মাসে মস্কো সফর করেন শি।

ওই সফরে শি মন্তব্য করেন, চীন ও রাশিয়া 'নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক ভরসা ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক তৈরি করেছে এবং তা ক্রমাগত গভীর হয়েছে। দেশ দুইটি গোলযোগপূর্ণ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির মাঝেও পারস্পরিক সম্পর্কে স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক শক্তি নিয়ে আসতে পেরেছে, যা অত্যন্ত মূল্যবান।'