কাঁদবার শক্তিও নেই গাজার ক্ষুধার্ত শিশুদের

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
29 August 2025, 04:22 AM
UPDATED 29 August 2025, 12:08 PM
২০২৩ সালের অক্টোবরের ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে গাজায় খাবার ও অন্যান্য নিত্যপণ্য প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েল।

গাজায় ইসরায়েলের ২২ মাসের আগ্রাসনে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ফিলিস্তিনি শিশুরা। অনাহার, অপুষ্টি ও রোগ-শোকে জর্জরিত গাজার শিশুদের চরম দুরবস্থার কথা হৃদয়গ্রাহী ভাষায় তুলে ধরেছেন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রেসিডেন্ট।

তিনি বর্ণনা দেন, দিনের পর দিন ন্যুনতম খাবারটুকুও না পেয়ে গাজার শিশুরা এতোটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে তারা কাঁদতেও পারছে না।  

গত বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বিষয়টি জানা গেছে।

গত বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সংঘাত নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রেসিডেন্ট ইনগার অ্যাশিং জানান, গত সপ্তাহে জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়েছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, এটা শুধুই একটি 'বলার জন্য বলা কারিগরি শব্দ নয়'।

তিনি বলেন, 'যখন যথেষ্ট খাবারের যোগান থাকে না, তখন শিশুরা ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভোগে। তখন তারা ধীরে ধীরে বেদনাদায়ক মৃত্যুর দিকে আগাতে থাকে। সহজ ভাবে বলতে গেলে, দুর্ভিক্ষের মূল অর্থ এটাই।'

কিভাবে না খেতে পেয়ে শিশুরা মারা যায়, তার মর্মান্তিক বর্ণনা দেন ইনগার।

তিনি জানান, বেশ কয়েক সপ্তাহ ক্ষুধার্ত থাকলে শারীরিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেহে সঞ্চিত চর্বি থেকে শক্তি আহরণ করে বেঁচে থাকতে বাধ্য হয় শিশুরা। তারপর যখন সেই চর্বিটুকু শেষ হয়ে যায়, তখন কার্যত 'পেশী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ' খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতে থাকে। এভাবে শরীরের ক্ষয় অব্যাহত থাকে। 

'তা সত্ত্বেও, আমাদের ক্লিনিকগুলো প্রায় নীরব। এখন, (সেখানে থাকা) শিশুদের কথা বলার বা বেদনায় কেঁদে ওঠারও শক্তি নেই। তারা দুর্বল অবস্থায় শুয়ে থাকে। কার্যত, তাদের দেহ ক্ষয়ে যাচ্ছে', বলেন তিনি। 

২০২৩ সালের অক্টোবরের ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে গাজায় খাবার ও অন্যান্য নিত্যপণ্য প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েল।

ইনগার জানান, চলমান পরিস্থিতি বিচারে ত্রাণসংস্থাগুলো বেশ কিছুদিন ধরেই দুর্ভিক্ষের বিষয়ে হুশিয়ারি দিয়ে আসছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশে ইনগার বলেন, 'এই কক্ষে যারা আছেন, তাদের সবার কাঁধে এই (ইসরায়েলের এই) বর্বরতা থামানোর আইনি ও মানবিক দায়িত্ব বর্তায়।'

Gaza Child
অপুষ্টিতে ভুগছে ইয়ানা আয়াদ। সঙ্গে তার মা নাসমা আয়াদ। ছবি: রয়টার্স

গত শুক্রবার ২২ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় 'দুর্ভিক্ষ' পরিস্থিতির ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। কারণ হিসেবে ২২ মাসের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইসরায়েলের 'নিয়মতান্ত্রিক ত্রাণ অবরুদ্ধকরণ' এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। 

জাতিসংঘের সমর্থনে পরিচালিত ক্ষুধা নিরীক্ষক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেস ক্লাসিফিকেশন ইনিশিয়েটিভ (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা গভর্নরেটে পাঁচ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। গাজা গভর্নরেটের আওতায় মোট ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ জায়গা অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে গাজা সিটিও আছে।

আইপিসির পূর্বাভাষ মতে, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ গাজার দুই তৃতীয়াংশ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে।

বুধবার আইপিসির প্রতিবেদনকে 'বানোয়াট' আখ্যা দিয়ে এটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ইসরায়েল। 

বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের পর ১৪ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বাকি ১৩টি রাষ্ট্র একটি সমন্বিত ঘোষণা দিয়েছে। দেশগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষের ঘোষণায় 'উদ্বেগ ও ক্ষোভ' প্রকাশ করেছে এবং জানিয়েছে, তারা আইপিসির কর্মপদ্ধতিতে ভরসা রাখে।  

যথারীতি, ইসরায়েলের বিপক্ষে যেতে পারে এমন কোনো উদ্যোগ বা সিদ্ধান্তের সঙ্গে সুর মেলায়নি দেশটির সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।

ওই ঘোষণায় বলা হয়, 'ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার আন্তর্জাতিক মানবিক আইনে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গাজার দুর্ভিক্ষ অবিলম্বে দূর করতেই হবে।'