‘তার স্বপ্নের সিনেমা ছিল জীবন থেকে নেয়া’

শাহ আলম সাজু
শাহ আলম সাজু
19 August 2025, 14:41 PM
‘এত সুন্দর করে তিনি মানুষের জীবনের কথা লিখেছেন।’

এদেশের কালজয়ী কথাশিল্পী এবং প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের ৯০তম জন্মদিন আজ ১৯ আগস্ট। তার পরিচালিত 'জীবন থেকে নেয়া' ইতিহাস হয়ে আছে। আরও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র তিনি পরিচালনা করে গেছেন। লেখক হিসেবে 'হাজার বছর ধরে' উপন্যাস তাকে বাঁচিয়ে রাখবে আরও হাজার বছর। 'বরফ গলা নদী' তার অসাধারণ একটি সৃষ্টি। 'আরেক ফাল্গুন'ও তার অনন্য সৃষ্টি।

ক্যামেরার কবি জহির রায়হানের ৯০তম জন্মদিনে তাকে নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন তার স্ত্রী ও ষাটের দশকের সাড়া জাগানো নায়িকা কোহিনূর আক্তার সুচন্দা।

সুচন্দা বলেন, জহির রায়হানের চিন্তা-ভাবনা কিংবা চিন্তা-চেতনা অনেক আগাম ছিল। অনেক বছর পর কী ঘটতে পারে, তা তিনি ভাবতেন বেশ আগেই। সেসব ভাবনা কখনো লিখতেন, কখনো সিনেমায় তুলে আনতেন। তার মধ্যে সাংঘাতিকভাবে এই গুণটি ছিল। আমি মাঝেমধ্যে অবাক হতাম—কী করে এত মেধা ও গুণ মানুষের থাকে? তার এই গুণ আমাকে মুগ্ধ করত। ভীষণ মুগ্ধ হতাম।

'একটা মানুষ কত কী নিয়ে কাজ করতেন! ছোট গল্প, উপন্যাস, সিনেমা আরও কত কী।'

'জীবন থেকে নেয়া' একটি কালজয়ী সিনেমা। এই প্রসঙ্গে সুচন্দা বলেন, 'জীবন থেকে নেয়া' ছিল জহির রায়হানের স্বপ্নের সিনেমা। এত বড় স্বপ্নের সিনেমা ছিল, যা বলে শেষ করা যাবে না। 'জীবন থেকে নেয়া' নির্মাণ করার পর তিনি বলতেন, এরপর আর কী সিনেমা বানাব!

তিনি বলেন, 'জীবন থেকে নেয়া' দেখে সারা বিশ্বের মানুষ মুগ্ধ হয়েছেন, প্রশংসা করেছেন। তিনি সব সময় মারামারি ও হানাহানির বিরুদ্ধে কথা বলতেন। আমি মনে করি 'জীবন থেকে নেয়া' সিনেমা বানানো সহজ কথা নয়। সেটি তিনি বানিয়েছেন। সত্যজিৎ রায়সহ অনেক বড় বড় নির্মাতারা "জীবন থেকে নেয়া" দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তার নির্মাণ মানেই ভিন্ন কিছু। এখনো সেগুলোর আবেদন রয়েছে।

'তার কর্মকে যদি দেখি, অনেক কিছু বুঝতে পারি। একেকটা সিনেমা যেন একেকটা স্বপ্ন। একেকটা উপন্যাস একেকটা স্বপ্ন।'

জহির রায়হানের উপন্যাসগুলো এখনো পাঠক-নন্দিত। আপনার প্রিয় কোনটি? জানতে চাইলে সুচন্দা বলেন, তার সব লেখাই আমার প্রিয়। পাঠকেরও প্রিয়। আমি শুধু বলতে চাই, তার লেখা "হাজার বছর ধরে" ও "বরফ গলা নদী" উপন্যাস দুটো নিয়ে। "হাজার বছর ধরে" উপন্যাসে যেন এই দেশের গ্রামীণ জীবনের কথা কবিতার মতো করে বর্ণনা করা হয়েছে। এত সুন্দর ও নিখুঁতভাবে তিনি উপন্যাসটি লিখেছেন, যা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবে। এটি নিয়ে আমি অনেক পরে সিনেমা নির্মাণ করেছি।

'বরফ গলা নদী' প্রসঙ্গে সুচন্দা বলেন, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনের কথা তুলে ধরেছেন তিনি এই উপন্যাসে। ছবির মতো করে লিখেছেন। এত সুন্দর করে মানুষের জীবনের কথা লিখেছেন, ভাবতেই ভালো লাগে।