আফগানিস্তান: তালেবানের ক্ষমতা দখলের ৪ বছর

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
17 August 2025, 16:28 PM
২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুলে সরকারের পতন হয় এবং তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে। চার বছর পর তালেবানদের ক্ষমতা আরও দৃঢ় হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মত দেন। 

চার বছর আগে আফগানিস্তানের শাসনক্ষমতার দখল নেয় তালেবান গোষ্ঠী। সে সময় থেকে শুরু করে দেশটি এখনও গভীর মানবিক সংকটের মধ্যে রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, তালেবানরা নানা উপায়ে এ পরিস্থিতিকে তাদের সুবিধার জন্য কাজে লাগাচ্ছে।

গত শুক্রবার ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে তালেবান শাসনের চার বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

রুশ স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা

২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর কাবুলে সরকারের পতন হয় এবং তালেবানরা ক্ষমতা দখল করে। চার বছর পর তালেবানদের ক্ষমতা আরও দৃঢ় হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মত দেন। 

জার্মানিসহ কিছু সরকার কাবুলের সরকারের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করছে।

Taleban celebration
তালেবানদের ৪ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান। ছবি: এএফপি

রাশিয়া গত জুলাই মাসে প্রথম দেশ হিসেবে তালেবানদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। প্যারিসের ইনালকো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষক সরদার রহিমী বলেন, 'এভাবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র আগে যে ভূমিকা নিয়েছিল, এখন তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে রাশিয়া। মার্কিনিরা চার বছর আগে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় তাদের ওই অবস্থান ছেড়ে দেয়।'

চীনও তালেবান শাসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখছে। বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দিলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কূটনৈতিক প্রোটোকল অনুযায়ী তালেবান রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন।

জার্মানি থেকে আফগানিস্তানে ফেরত

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর জার্মানি আফগানিস্তানে দুটি প্রত্যাবাসন ফ্লাইটের আয়োজন করে। মোট ১০৯ জন আফগান নাগরিককে তাদের দেশে পাঠানো হয়েছে—যাদের অর্ধেকের বেশি বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থা প্রো অ্যাসাইল এই প্রত্যাবাসন ফ্লাইটগুলোকে 'আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন' বলে নিন্দা জানিয়েছে।

ইরান ও পাকিস্তান থেকে ব্যাপক নির্বাসন

তবে ইউরোপ থেকে বিতাড়িত আফগান নাগরিকের সংখ্যা দেশটির প্রতিবেশী দেশ ইরান ও পাকিস্তান থেকে ব্যাপক বিতাড়ণের তুলনায় একেবারেই নগণ্য।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে শুধু ওই দুই দেশ থেকেই ২১ লাখের বেশি আফগানকে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নথিভুক্ত করেছে।

Afghan refugees in pakistan
পাকিস্তানের খোরাসানে আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় শিবির। ফাইল ছবি: এএফপি

নারী অধিকার সংকট

তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের জনজীবন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। দেশটির ১২ বছরের বেশি বয়সি প্রায় ১৪ লাখ মেয়ে আর স্কুলে যেতে পারছে না। পাশাপাশি, তরুণী নারীদের উচ্চ বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

Afgan Ladies
তালেবান শাসনামলে নারীদের ভূমিকা একেবারেই গৌণ হয়ে পড়েছে। ছবি: এএফপি

সাবেক আফগান কূটনীতিক শুকরিয়া বরকজাই বলেন, 'নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তালেবানরা নারীদের ব্যবহার করছে। তারা তাদের শাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নতুন নতুন বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে নারীদের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।'

মানবিক সংকট

ইইউ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, আফগানিস্তানে দারিদ্র্যের কারণে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। এটি দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি চারজনের মধ্যে একজন আফগান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

Afghan refugee in Islamabad
ইসলামাবাদের একটি সড়কের পাশে মশারী টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আফগান শরণার্থী। ফাইল ছবি: এএফপি

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় মানবিক সংকট আরও গভীর হয়েছে।

যার ফলে ৩০ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না এবং ৪২০টি ক্লিনিক বন্ধ হয়ে গেছে।