নেতানিয়াহুকে ‘গ্রেপ্তার’ করবে নরওয়ে

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
14 August 2025, 07:17 AM
২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

বিশ্বের অন্যতম সুখী দেশ নরওয়ে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অসলো জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাদের দেশে পা রাখলেই গ্রেপ্তার করা হবে।

গতকাল বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে মিডল ইস্ট মনিটর।

২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

গত মঙ্গলবার নরওয়ের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেয়াস ক্রাভিচ জানিয়েছেন, তার দেশ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।

ক্রাভিচ নিশ্চিত করেন, নেতানিয়াহু নরওয়েতে নামলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

তিনি জানান, আইসিসির অন্যতম সদস্য হিসেবে ওই আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে নরওয়ের। এতে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অসলোর অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটবে।

'এই অবস্থান আইসিসির ম্যান্ডেটের প্রতি ও আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের জবাবদিহির আওতায় আনার বিষয়টির প্রতি নরওয়ের পুরো সমর্থন আছে,' বলেন ক্রাভিচ।

kravic.jpg
নরওয়ের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রাভিচ। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

আইসিসির রায় প্রকাশের পর নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডে মন্তব্য করেন, 'গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিতে আইসিসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।'

২০২৪ সালের মে মাসে নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট ও হামাসের তিন নেতার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলেন আইসিসি প্রধান কৌঁসুলি করিম খান।

তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ নভেম্বরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি।

পরবর্তীতে নেতানিয়াহু দাবি করেন, 'এই রায় ইহুদিবিদ্বেষী।'

এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে তিনি বলেন, 'এই রায়ের গুরুত্ব নেই।'

সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্যালান্ট বলেন, 'হেগের আদালতের এই বিচার স্মৃতিতে থেকে যাবে। এই রায় ইসরায়েল রাষ্ট্র ও হত্যাকারী হামাস নেতাদের একই আসনে বসিয়েছে। এই রায় হামাসের সহিংসতাকে সমর্থন করেছে। তারা যেভাবে শিশুদের হত্যা করেছে, নারীদের নির্যাতন করেছে, প্রবীণদের বিছানা থেকে তুলে নিয়ে গেছে, তা এই রায়ে সমর্থন পেলো।'

আরও যে সব দেশ নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করবে

নরওয়ের পাশাপাশি আরও কয়েকটি দেশ আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে।

অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ জানান, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে দরকষাকষি করা যাবে না। তিনি নিশ্চিত করেন, অস্ট্রিয়া এই পরোয়ানার প্রতি সম্মান জানাবে।

নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে কানাডার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছিলেন, তার দেশ  'আন্তর্জাতিক আদালতের সব ধরনের রায় ও নিয়ম-নীতি মেনে চলবে।'

আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস জানান, নেতানিয়াহু তার দেশে আসলে তাকে 'নিঃসন্দেহে' গ্রেপ্তার করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিকেল মার্টিন আইসিসির রায়ের প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধাশীল থাকার অনুরোধ জানান।

নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাসপার ভেলদকাম্প ঘোষণা দেন, নেদারল্যান্ডস রোম চুক্তি 'শতভাগ' মেনে চলবে। এই ঘোষণায় তিনি নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

লিথুয়ানিয়া, জর্ডান, বেলজিয়াম, স্পেন, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডও আইসিসির সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানানোর কথা নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে, নিউইয়র্ক শহরের ডেমোক্রেটিক পার্টির মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি জানিয়েছিলেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে এবং সেসময় নেতানিয়াহু তার শহরে এলে তাকে গ্রেপ্তারের পক্ষে মত দেবেন।

তবে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই গ্রেপ্তারি নির্দেশের নিন্দা জানিয়েছে এবং আদালতের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ দিয়েছে।