ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের নিন্দা

By স্টার অনলাইন ডেস্ক
25 July 2025, 03:37 AM
UPDATED 25 July 2025, 23:13 PM
মাখোঁ এক্সে দেওয়া বার্তায় উল্লেখ করেন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফ্রান্স। গতকাল প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার পর যথারীতি প্রশংসা ও নিন্দা, উভয়ই কুড়িয়েছে ইউরোপের এই পরাশক্তি

আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

Palestinian flag in France
ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারের পাশে ওড়ানো হয় ফিলিস্তিনি পতাকা। ফাইল ছবি: এএফপি

মাখোঁর এক্স বার্তা

মাখোঁ এক্সে দেওয়া বার্তায় উল্লেখ করেন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পরবর্তী অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

এক্স পোস্টে মাখোঁ লেখেন, 'এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো গাজায় যুদ্ধের অবসান ও সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা করা।'

'শান্তি সম্ভব। আমাদের এখনই একটি যুদ্ধবিরতি দরকার, সব বন্দীর মুক্তি এবং গাজার জনগণের জন্য বিপুল মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে, গাজাকে সুরক্ষিত করতে হবে ও পুনর্নির্মাণ করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তা পুনর্গঠন করতে হবে। আমাদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, তার টিকে থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।'

মাখোঁ বলেন, এসব করতে হলে ফিলিস্তিনকে নিরস্ত্রীকরণে সম্মত হতে হবে ও ইসরায়েলকে সম্পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে হবে। আর এই উদ্যোগই এ অঞ্চলের সবার নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট তার পোস্টে আরও বলেন, ফ্রান্সের নাগরিকরা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চায়। ফরাসি, ইসরায়েলি, ফিলিস্তিনি, ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদার— সবার দায়িত্ব এটা প্রমাণ করা যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

চিঠি লিখে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্টকে (মাহমুদ আব্বাস) এ বিষয়গুলো জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মাখোঁ।

প্রথম জি৭ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি

এএফপির হিসেব অনুযায়ী, এই উদ্যোগের মাধ্যমে জাতিসংঘের অন্তত আরও ১৪২ সদস্য রাষ্ট্রের কাতারে যোগ দেবে ফ্রান্স, যারা ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে বা দিতে চলেছে।

এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ধনী রাষ্ট্রের জোট জি৭ এর প্রথম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চলেছে ফ্রান্স।

ফ্রান্সের এই ঘোষণার বিপরীতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশ ও মহলের প্রতিক্রিয়া নিচে তুলে ধরা হলো

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও মাখোঁর ঘোষণায় ক্রোধ প্রকাশ করেছেন। তিনি একে 'অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত' বলে অভিহিত করেন।

Rubio
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: এএফপি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলার দিকে ইঙ্গিত করে এক্সে রুবিও উল্লেখ করেন, 'এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত শুধু হামাসের অপপ্রচারের পক্ষে যাচ্ছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দিচ্ছে। এটা ৭ অক্টোবরের ভুক্তভোগীদের গালে চপেটাঘাতের সমতুল্য।'

ইসরায়েল

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই উদ্যোগকে 'জঙ্গিবাদকে পুরস্কৃত করার' সঙ্গে তুলনা করেন এবং জানান, এতে 'ইরানের আরেকটি সহযোগী তৈরির হুমকি সৃষ্টি হয়েছে, যেমনটা গাজা হয়েছে।' 

Netanyahu
ওভাল অফিসে নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

'চলমান পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ইসরায়েল ধ্বংসের "লঞ্চ প্যাড" হতে পারে, এটি কোনো শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ হবে না', যোগ করেন তিনি। 

স্পেন

স্পেন ইতোমধ্যে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ মাখোঁর ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'নেতানিয়াহু যা ধ্বংস করতে চাইছেন, তা আমরা একত্রে প্রতিহত করব। দুই-রাষ্ট্র সমাধান হচ্ছে একমাত্র সমাধান।'

সৌদি আরব

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই 'ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে' স্বাগত জানিয়ে বলে, 'যেসব দেশ এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদেরও উচিত একই ধরণের ইতিবাচক এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ফিলিস্তিনি জনগণের আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন জানিয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া।'

জর্ডান

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুফিয়ান কুদাহ এক বিবৃতিতে বলেন, 'দুই রাষ্ট্র-সমাধান বাস্তবায়ন ও (ইসরায়েলের) অধিগ্রহণের অবসানের পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।'

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ

Macron and Abbas
ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ফাইল ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হুসেন আল-শেখ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি 'আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার ও আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকারের প্রতি ফ্রান্সের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।'

হামাস

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী হামাস এই উদ্যোগকে 'সঠিক ও ইতিবাচক উদ্যোগ' বলে অভিহিত করেছে। তারা জানায়, এতে শোষিত ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও তাদের বৈধ অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।

ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও ফ্রান্সের মতো উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানায় হামাস।