অস্তিত্ব সংকটে রংপুর নগরীর ‘লাইফলাইন’ শ্যামাসুন্দরী খাল

এস দিলীপ রায়
এস দিলীপ রায়
28 June 2025, 15:26 PM
দূষণ, দখল, আর অব্যবস্থাপনায় অস্তিত্ব সংকটে রংপুর নগরবাসীর আশীর্বাদ শ্যামাসুন্দরী খাল।

দূষণ, দখল, আর অব্যবস্থাপনায় অস্তিত্ব সংকটে রংপুর নগরবাসীর আশীর্বাদ শ্যামাসুন্দরী খাল।

এক সময় স্থানীয় বাসিন্দারা খালটিকে ভালোবেসে 'নগরীর লাইফলাইন' নামে ডাকতেন। ঐতিহাসিক এই খালটি এখন আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

ইতিহাস অনুসারে, ১৮৯০ সালে মহারাজা জানকী বল্লভ সেন শ্যামাসুন্দরী খাল খননের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার। এক সময় এর প্রস্থ ছিল ৬০ থেকে ১২০ ফুট। এখন তা কোথাও কোথাও মাত্র ১৫ ফুটে নেমে এসেছে।

shyama_sundari_khal_rangpur2_28june25.jpg
ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

দুই পারে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। সরাসরি যাচ্ছে শৌচাগারের বর্জ্য। এছাড়া, অন্যান্য আবর্জনা ও ব্যবহৃত পলিথিন-প্লাস্টিক ফেলার জায়গা হিসেবে নগরবাসী বেছে নিয়েছেন এই খালটি।

ফলাফল—পানি প্রবাহ বন্ধ, চারদিকে দুর্গন্ধ, আর সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

গত দুই দশকে শ্যামাসুন্দরী খাল উন্নয়নে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন ব্যয় করেছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। তবু খালটি প্রাণ ফিরে পায়নি।

সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ড খাল সংস্কারে নতুন করে ১৫ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এতে রয়েছে খাল
পরিষ্কার, পুনঃখনন, সবুজায়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা। তবে এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করেছে প্রশাসন। সে অনুযায়ী ধাপে ধাপে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।

'পানি উন্নয়ন বোর্ডের নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শ্যামাসুন্দরী খাল নতুন জীবন ফিরে পাবে,' আশা করেন তিনি।

রিভারাইন পিপল-এর পরিচালক এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, 'খালটি রক্ষা করা শুধু প্রশাসনের একক দায়িত্ব নয়। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন ও নগরবাসী—সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।'

তিনি আরও বলেন, 'ঘাঘট নদের উৎসমুখ খুলে দেওয়া, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, দূষণ বন্ধ ও বৈজ্ঞানিকভাবে খাল খনন—এই চারটি ধাপ নিশ্চিত করতে পারলেই শ্যামাসুন্দরী খাল আবারও প্রাণ ফিরে পাবে।'

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শ্যামাসুন্দরী খাল শুধুমাত্র একটি জলাশয় নয়—এটি রংপুরের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও টেকসই নগর ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রবিন্দু।

এখন সময় খালটিকে বাঁচানোর; না হলে একদিন হয়তো ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে এই নগরীর 'লাইফলাইন'।

মুন্সীপাড়ার বাসিন্দা জহির উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, 'বর্ষাকালে খালের নোংরা পানি আমাদের বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে।
প্রচণ্ড মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।'

চামড়াপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী আদম আলী সরকার বলেন, 'খাল উন্নয়নের আশায় ২০১৯ সালে আমরা নিজের হাতে বাড়ি ভেঙে জায়গা ছেড়েছিলাম। এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই।'

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের নেওয়া প্রকল্পটি ইতোমধ্যে অনুমোদন পেয়েছে। আগামী অর্থবছরে কাজ শুরু হবে। সিটি করপোরেশন ও বন বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে তিনটি স্তরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।'