শিল্পের সঙ্গে বসবাস করেছি বলেই জীবন এত সুন্দর হয়েছে: আবুল হায়াত

শাহ আলম সাজু
শাহ আলম সাজু
8 June 2025, 05:57 AM
‘আমার জীবনে স্ত্রীর অবদান পুরোটাই।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান অভিনয়শিল্পী আবুল হায়াত। তার পরিবারকে বলা হয় শিল্পী পরিবার। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে তিনি বিরামহীনভাবে পথ চলছেন অভিনয়ে। একজন নাট্যকারও তিনি। প্রচুর নাটক পরিচালনা করেছেন। নাটকের দল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে ছিলেন বহু বছর। মঞ্চে একসময় সাড়া জাগানো নাটকে অভিনয় করেছেন।

এখনো অভিনয়ে সরব আছেন গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত। এবারের ঈদের জন্যও একটি নাটক পরিচালনা করেছেন। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা।

দ্য ডেইলি স্টার: ঈদের জন্য একটি নাটক পরিচালনা করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে বলুন...

আবুল হায়াত: রাবেয়া খাতুনের গল্প নিয়ে একটি নাটক পরিচালনা করেছি। নাটকের নাম লেখক। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছি। আরও অভিনয় করেছেন খায়রুল আলম সবুজ, তৌকীর আহমেদ, বিজরী বিরকতউল্লাহ, শাহেদ আলীসহ অনেকে।

ডেইলি স্টার: সম্প্রতি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে আজীবন সম্মান পেয়েছেন। কেমন লাগছে?

আবুল হায়াত: সম্মান পেলে ভালো লাগে। পুরস্কার ও সম্মান এক ধরনের ভালোবাসাও বটে। শেষ বয়সে বড় স্বীকৃতি আনন্দ দেয়। যারা পুরস্কার দিয়েছেন তাদের প্রতি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা। দর্শকদের জন্যই আজকের আমি, তাদের প্রতি ভালোবাসা।

ডেইলি স্টার: বর্ণাঢ্য অভিনয়জীবন আপনার। তারপরও না পাওয়ার বিষয়টি কাজ করে কি?

আবুল হায়াত: অপূর্ণতা মাঝে মাঝে কাজ করে। একজন শিল্পী মনে করে আরও ভালো ভালো কাজ করতে পারবে। মনের ভেতর এক ধরনের ক্ষুধা কাজ করে ভালো কাজের। একজন শিল্পী যদি সব পেয়ে যায়, তাহলে ভালো কাজের আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। আমার জীবনে কখনোই মনে হয়নি অপূর্ণতা আছে। সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক পেয়েছি। এত এত মানুষের ভালোবাসা এই জীবনে পেয়েছি, তা অনেক। যেমন: এই জীবন নিয়ে আমি পরিপূর্ণ তৃপ্ত আছি। কিন্তু, শিল্পীজীবনে কিছু কাজ মনে হয় বাকি রয়ে গেছে।

abul_hayat.jpg
বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াত আজ ৮০ বছরে পা রাখলেন। ছবি: স্টার

ডেইলি স্টার: দীর্ঘ শিল্পীজীবনের দর্শন কী?

আবুল হায়াত: সহজ সরল জীবনযাপন করব—এটাই ছিল আমার জীবনের দর্শন। হাসি-খুশি ও আনন্দময় জীবনযাপন করব। একটা সুন্দর ও নির্মল জীবন কাটাব। ওপরঅলার অশেষ ভালোবাসায়, দয়ায় একটা সুন্দর জীবন অতিবাহিত করতে পারছি। তার প্রতিই সমস্ত কৃতজ্ঞতা।

ডেইলি স্টার: আপনার জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা কতটুকু?

আবুল হায়াত: আমার জীবনে স্ত্রীর অবদান পুরোটাই। স্ত্রীর এই সাপোর্ট না থাকলে, তার সাপোর্ট না পেলে এতগুলো কাজ করতে পারতাম না। অভিনয় নিয়ে এতদূর আসতে পারতাম না। পারিবারিক জীবনে আমি অসম্ভব সুখী।

ডেইলি স্টার: এমন কেউ আছে যে আপনাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছে?

আবুল হায়াত: আছে। বাবাকে দিয়ে আমি ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছি। বাবার কাছ থেকে অনেককিছু শিখেছি। বাবা সৎ একটা জীবন পার করে গিয়েছেন। ওটা আমাকে প্রবলভাবে টেনেছে। বাবা একটি কথা বলতেন, চাইবে কম পাবে বেশি। এটা আমি আমার জীবনে দেখেছি এবং মিলেও গেছে। আসলেই চেয়েছি কম, কিন্তু পেয়েছি অধিক। ছোটবেলা থেকেই বাবার কথা ও জীবন দ্বারা প্রভাবিত আমি।

abul hayat.jpg
আবুল হায়াত ও তার স্ত্রী শিরিন। ছবি: সংগৃহীত

ডেইলি স্টার: মঞ্চে ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন?

আবুল হায়াত: মঞ্চে ফেরার ইচ্ছে তো ছিল। কিন্তু, শরীরের শক্তি কমে গেছে। বয়স হয়েছে। এখন আর সম্ভাবনা দেখছি না। মঞ্চের জন্য নাটক লেখার ইচ্ছে আছে। সম্ভব হলে লিখব। মূলত, অমি তো মঞ্চেরই অভিনেতা, মঞ্চেরই শিল্পী। সেখান থেকেই অভিনয়ে যাত্রা শুরু।

ডেইলি স্টার: বর্তমানে সময় কাটে কীভাবে?

আবুল হায়াত: সময় কেটে যায়। কখনো টেলিভিশন দেখি। কখনো গান শুনি। মাঝে মাঝে নক্ষত্রবাড়িতে যাই। নক্ষত্রবাড়িতে থাকাটা এনজয় করি। খেলা দেখি। আড্ডা দিই। এভাবেই সময় কেটে যায়।

ডেইলি স্টার: কখনো নস্টালজিক হন?

আবুল হায়াত: হই তো। অনেক কিছু দেখলেই নস্টালজিক হয়ে পড়ি। আমার মনে হয় সবাই কম-বেশি নস্টালজিক হন। আমিও হই। জীবন থেকে কত কত সময় চলে গেছে। কত কত স্মৃতি আছে। সেসব তো কখনো কখনো মনে পড়ে।

ডেইলি স্টার: শিল্পের সঙ্গে সবাই বসবাস করতে পারেন না। কিন্তু আপনি পুরো একটা জীবন কাটিয়ে দিলেন...

আবুল হায়াত: শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাটাকে আমি ইতিবাচকভাবে দেখি। শিল্পের সঙ্গে বসবাস করেছি বলেই জীবন এত সুন্দর হয়েছে। শিল্পভাবনা, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা, শিল্পের সঙ্গে ওঠাবসা—এসব তো জীবনকে সমৃদ্ধ করে।