ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাক সংক্রমণ হয় কেন, সমাধান কী

স্মৃতি মন্ডল
স্মৃতি মন্ডল
27 March 2025, 14:32 PM
UPDATED 28 March 2025, 11:17 AM
নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।

ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা ছত্রাকের সংক্রমণ মাইকোসিস নামেও পরিচিত। এ রোগটির বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে জানিয়েছেন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।

ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ কী ও কেন হয়

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণকে সাধারণত ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

সুপারফিশিয়াল ফাঙ্গাল ইনফেকশন- এটি ত্বকের সবচেয়ে ওপরের স্তরে সংক্রমণ ঘটায়। সুপারফিসিয়াল ফাঙ্গাল সংক্রমণ ত্বক, নখ ও চুলে প্রভাব ফেলে। এছাড়া মিউকাস মেমব্রেন মুখের ভেতরে, যৌনাঙ্গে সংক্রমণ ঘটায়।

কিউটেনিয়াস ফাঙ্গাল ইনফেকশন- এটি ত্বকের গভীর স্তরে সংক্রমণ ঘটায়।

ডিপ ফাঙ্গাল ইনফেকশন- শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গকে আক্রান্ত করে।

ত্বকে সাধারণত রিংওয়ার্ম এবং পিটাইরিয়াসিস ভার্সিকালার ধরনের সংক্রমণ বেশি হয়। রিওয়ার্মের ফলে ত্বকে গোল গোল রিংয়ের মতো আকৃতি হয়ে থাকে, যেটার চারদিক একটু উঁচু এবং দানা দানা থাকে, গোলাকার লালচে চাকা থাকে। ধীরে ধীরে কালো হয়ে যায়, চুলকানি হয়।

পিটাইরিয়াসিস ভার্সিকালার ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণের ফলে হালকা সাদা, হালকা বাদামী বা গাঢ় রঙের ছোট ছোট অনেক ছোপ দেখা যায়। ত্বকে ঘাম জমে থাকার কারণে এটি হয়। সাধারণত পিঠে, বুকে, কাঁধ, ঘাড়, হাতের ওপরের অংশে বেশি দেখা যায়। গরমে বা রোদে গেলে হালকা চুলকানি ও জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হয়।

শরীরের নানা ভাঁজ, বগলের নিচে, বুকে, পেটে, পায়ের ভাঁজে বিশেষ করে যে অংশ সবচেয়ে বেশি আর্দ্র থাকে, ঘাম জমে এবং অতিরিক্ত ঘষা লাগে সেসব অংশে ছত্রাক সংক্রমণ বেশি হয়।

ছত্রাক সংক্রমণ শরীরের যেকোনো স্থানেই হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ছত্রাকের সংক্রমণ অনুযায়ী নামও ভিন্ন হয়।

১.  স্কাল্প বা মাথার ত্বকের ছত্রাক সংক্রমণকে টিনিয়া ক্যাপিটিস বলা হয়।

২. পুরুষদের দাড়ি ও গোঁফে ছত্রাক সংক্রমণকে বলা হয় টিনিয়া বারবি।

৩. বডির ট্রাঙ্ক বা শরীরের মূল অংশ যেমন- বুক, পিঠ, পেট ও পায়ের অংশে যখন হয় তখন এটিকে বলা হয় টিনিয়া করপোরিস।

৪. পায়ের ভাঁজে, কুঁচকি, নিতম্বের ভেতরের দিকে সংক্রমণকে বলা হয় টিনিয়া ক্রুরিস।

৫.  আঙুলে সংক্রমণকে বলে টিনিয়া আঙ্গুয়াম।

৬.  নখের ছত্রাক সংক্রমণকে বলা হয় অনাইকোমাইকোসিস। নখে ছত্রাক সংক্রমণ হলে নখ ত্বক থেকে আলাদা বা আলগা হয়ে যায়, নখ সাদা হয়ে যায়, নখের রং পরিবর্তন হয়। ভঙুর হয়ে যায়, মোটা হয়ে যায়, নখ বিকৃত হয়ে যায়।

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং অপরিচ্ছন্নতার কারণে ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণ হয়ে থাকে। এটি ছোঁয়াচে, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ ও ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা, চাদর, জুতা, মোজা, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার করার কারণে অন্যরাও আক্রান্ত হতে পারেন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকার কারণে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। শরীরে যদি ঘাম জমে থাকে, ভেজা ও ঘামযুক্ত কাপড় দীর্ঘসময় পরিধান করে থাকার কারণে এটি হতে পারে। আন্ডার গার্মেন্টস নিয়মিত পরিবর্তন না করার কারণে ঘাম জমে ছত্রাক সংক্রমণ হতে পারে। নিয়মিত গোসল না করার কারণে ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাবে হতে পারে।

এছাড়া ইমিউনোকম্প্রোমাইজড যারা, যাদের এইচআইভি সংক্রমণ আছে, ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, যারা ইমিউনোকম্প্রোমাইজ কোনো ওষুধ সেবন করছেন তাদের ছত্রাক হতে পারে।

চিকিৎসা

ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দেওয়া হয় রোগীকে মুখে খাওয়ার জন্য। কিছু ওষুধ দেওয়া হয় সরাসরি ত্বকে লাগানোর জন্য। এছাড়া আক্রান্ত স্থান ধোয়ার জন্য অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদানযুক্ত সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, ছত্রাকবিরোধী ওষুধ অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। অ্যান্টিফাঙ্গাল বা ছত্রাকবিরোধী ওষুধ সহজেই শরীরে রেসিস্ট্যান্ট বা ওষুধ প্রতিরোধ করে। তাই ওষুধ গ্রহণের পর ভালো না হলে পুনরায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, পরিস্থিতি অনুযায়ী চিকিৎসক ওষুধের ডোজ নির্ধারণ করে দেবেন বা ওষুধ পরিবর্তন করে দেবেন। নির্দিষ্ট সময় ধরে নিয়ম মেনে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

ছত্রাক সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ কিনে সেবন করেন, ত্বকে ব্যবহার করেন। সঠিক ডোজে বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিয়ে দেন ভুলবশত, যার ফলে ছত্রাক সংক্রমণ ভালো হওয়ার পরিবর্তে অনেক ক্ষেত্রে আরো বেড়ে যায়। তাই কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

প্রতিরোধ

ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে, নিয়মিত গোসল করতে হবে, শরীরে যাতে ঘাম জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, ছত্রাক সংক্রমিত ব্যক্তির কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে, জুতা, মোজা অর্থাৎ ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার না করা, সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে নিরাপদ দূরত্ব রাখা, তার ব্যবহৃত কাপড় ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করতে হবে। সংক্রমণ বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।