এই বছরের ঈদ ফ্যাশন: প্যাস্টেল নাকি গাঢ় রং?

By নুসরাত জাহান
9 March 2025, 13:38 PM
UPDATED 9 April 2025, 17:51 PM
এ বছর ফ্যাশন ট্রেন্ডে থাকবে বৈচিত্র্যের মিশেল- হালকা তবে নজরকাড়া, ঐতিহ্যবাহী অথচ আধুনিক এরকম স্টাইলই দেখা যাবে এবারের ঈদ বাজারে।

বছরটা যেন চোখের পলকেই কেটে যাচ্ছে, আর প্রতি বছরের মতো ঈদ উল ফিতরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতিও ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এ বছর ফ্যাশন ট্রেন্ডে থাকবে বৈচিত্র্যের মিশেল। হালকা তবে নজরকাড়া, ঐতিহ্যবাহী অথচ আধুনিক এরকম স্টাইলই দেখা যাবে এবারের ঈদ বাজারে।

এবার হালকা প্যাস্টেল শেডের পাশাপাশি রাজত্ব করছে গাঢ় বোল্ড শেড। গরম আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে এই রংগুলোর সঙ্গে যোগ করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের নান্দনিক ডিজাইন। উৎসবের আবহে মূল আকর্ষণ হয়ে উঠছে শাড়ি, আরামদায়ক অনারকলি, স্ট্রাকচার্ড কাফতান এবং নানা ডিজাইনের কামিজ সেট। আর সব ধরনের পোশাকেই আছে উৎসবের বিশেষ আবহ।

ঈদের পোশাক

শুরু করা যাক প্যাস্টেল দিয়ে। প্যাস্টেল প্যালেটের মধ্যে আছে- পাউডার ব্লু, ব্লাশ পিংক, ল্যাভেন্ডার এবং মিন্ট গ্রিন। যারা গরমে হালকা কিছু পরতে পছন্দ করেন তাদের জন্যই এই রংগুলো। হালকা এই রংগুলো যেকোনো মানুষের সৌন্দর্য যেমন তুলে ধরে, তেমনি এই ধরনের রং গ্রীষ্মের আবহাওয়ার সঙ্গে একেবারে মানানসই। হরেক রকমের লেইস আর সুতার নিখুঁত কাজ করা একটি প্যাস্টেল শেডের আনারকলি উৎসবের দিনের বেলা আপনাকে অপরূপ করে তুলতে পারে। নিখুঁত এম্ব্রয়ডারি করা ব্লাশ পিংক অর্থাৎ হালকা গোলাপি রঙের একটি আনারকলির সঙ্গে একটি সুন্দর অর্গানজা ওড়না অথবা পার্লের ডিজাইন করা মিন্ট গ্রিন একটি কামিজ সেট একইসঙ্গে ভীষণ সুন্দর এবং অভিজাত লাগবে।

২০২৪ সালে ফ্যাশন ট্রেন্ডে শাড়ি নতুনভাবে ফিরে এসেছে। বর্তমানে হ্যান্ড পেইন্টেড শাড়ি সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে। এ ধরনের শাড়িগুলোতে তুলি দিয়ে হাতের ছোঁয়ায় বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়, যা সবাইকে দারুণ মানিয়ে যায়। হালকা রঙের কোনো শাড়ির ওপর ফুলেল নকশা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মোটিফ তুলে ধরা হয়। সন্ধ্যার দাওয়াতে একটু অভিজাত ও জমকালো পোশাকের জন্য বেছে নিতে পারেন এম্ব্রয়ডারি ও ভারি কাজ করা শাড়ি। জমকালো সিল্ক ও শিফনের ওপর জারদৌসি, সিকুইন কিংবা মিররের সূক্ষ্ম কাজ শাড়ির ঝলমলে আবহকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে, যা উৎসবে সবার নজর কাড়বে।

ঈদ

ঈদের সকালে সাদা রং তার চিরন্তন আবেদন ধরে রাখে। সাদার ওপর হালকা কাজ করা কাফতানের মাধ্যমে শুরু করতে পারেন বিশেষ দিনটি। যারা বাড়তি কিছু যোগ করতে চান তারা অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন রূপার অলঙ্কার। প্যাস্টেল বা সাদা রঙের পোশাকের সঙ্গে হালকা গোলাপি ঠোঁট আর চোখে কাজলের ছোঁয়ায় হয়ে উঠুন অপূর্ব।

প্যাস্টেল বা সাদা রং যেমন সাজে কোমল, হালকা ভাব বজায় রাখে অন্যদিকে গাঢ় রং তার শক্তিশালী উপস্থিতি জানান দেয়। গাঢ় সবুজ, উজ্জ্বল মেজেন্টা ও আকর্ষণীয় লাল রং এখন আলোচনার কেন্দ্রে, যা উৎসবের পোশাকে এনে দেয় রাজকীয় ভাব। চিরকাল ঐতিহ্য ও উৎসবের প্রতীক এই রংগুলো উৎসবে বিশেষ মাত্রা যোগ করে। একবার ভাবুন, জারদৌসি কাজ করা গাঢ় ম্যাজেন্টা রঙের একটি কামিজ কীভাবে একইসঙ্গে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এম্ব্রয়ডারি করা লাল রঙের কাফতান বা ঝলমলে সোনালি সুতার ওড়নার লাল রঙা কামিজ সেট- লাল সবসময়ই আত্মবিশ্বাসী একটি রং। এর সঙ্গে অ্যান্টিক সোনার গয়না, বোল্ড মেকআপ আর গাঢ় লিপস্টিকে শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী লুক তৈরি করতে পারেন।

ঈদের পোশাক

গত কয়েক বছর ধরে ঈদের ফ্যাশনে পোশাকের কাটছাঁটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই মৌসুমেও ডিজাইনাররা দীর্ঘ হেমলাইন, ভারি ঘের ও ডিজাইন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। ঈদের পোশাকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো হাতের কাজ। হালকা রঙের মনোমুগ্ধকর কাফতান হোক বা গাঢ় রঙের ওপর সূক্ষ্ম রেশম ও আরি কাজ—হাতে করা সূচিকর্ম যে কোনো পোশাককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। এসব কারুকার্যের সৌন্দর্য এখানেই শেষ নয়, এটি সাধারণ নকশার পোশাককেও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে তোলে।

পুরো সাজকে পরিপূর্ণ করতে অনুষঙ্গ তো লাগবেই। ঠিকঠাক অনুষঙ্গ ও স্টাইলিং পোশাকের সামগ্রিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য অত্যাবশ্যক। নরম প্যাস্টেল রঙের পোশাকের সঙ্গে রূপার গয়না,  মুক্তার দুল এবং ন্যুড টোনের জুতো পোশাকের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। অন্যদিকে গাঢ় রঙের পোশাকের সঙ্গে চোখে পড়ার মতো অনুষঙ্গ ও গয়না বেছে নিন যেমন- মোটা সোনার গয়না, এম্ব্রয়ডারি করা পটলি ব্যাগ বা কারুকাজ করা জুতা। জুতার ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া যেতে পারে সূক্ষ্ম কাজ করা ঐতিহ্যবাহী খুসসা কিংবা আধুনিক লুক আনতে উঁচু হিল জাতীয় জুতা।

বিভিন্ন সময়ে ফ্যাশনের ধারা বদলালেও, এই ঈদে মূল ভাবনা হলো বৈপরীত্যকে গ্রহণ করা। কেউ সাদা কাফতানের কোমল সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারেন আবার কেউ বা গাঢ় সবুজ আনারকলির বোল্ড লুকে মুগ্ধ হতে পারেন। যে যাই বেছে নিক, ঈদের ফ্যাশনের সৌন্দর্যই হলো ব্যক্তিত্ব এবং ঐতিহ্যের সম্মিলন। সবচেয়ে সুন্দর পোশাক সেটিই, যা ব্যক্তিগত স্টাইলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যা একজনকে তার নিজস্ব উপায়ে উদ্ভাসিত করে তোলে।

ছবি: আব্দুল আলিফ

সিনেমাটোগ্রাফি: সুলতান ফারুকী

পোশাক: হাউজ অব আহমেদ

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম