ট্রুডো পরবর্তী কানাডার রাজনীতি কোন দিকে যাবে

মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
7 January 2025, 04:55 AM
UPDATED 7 January 2025, 11:18 AM
ট্রুডো (৫৩) সোমবার অটোয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দল নতুন একজন নেতা বেছে নেওয়ার পর আমি দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে আগ্রহী।’


গতকাল সকালেই জানা গেছিল পদত্যাগ করতে চলেছেন কানাডার এক কালের তুমুল জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। দিনের শেষভাগে এলো সেই বাস্তবতা।

সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির নেতার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ট্রুডো। স্বভাবতই, কানাডার রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

ট্রুডো (৫৩) সোমবার অটোয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন, 'দল নতুন একজন নেতা বেছে নেওয়ার পর আমি দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে আগ্রহী।'

ট্রুডো আরও জানান, আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত কানাডার পার্লামেন্টের সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এই সময়ের মধ্যে নতুন নেতা বেছে নেবে লিবারেল পার্টি।

আক্ষেপ নিয়ে পদত্যাগ করছেন ট্রুডো

ট্রুডো জানান, একটি মাত্র 'আক্ষেপ' নিয়ে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। কানাডার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার কার্যক্রম শেষ না করেই তিনি পদত্যাগ করতে চলেছেন।

justin trudeau.JPG
জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

উল্লেখ্য, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কানাডার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

'অনেকগুলো আক্ষেপের কথাই বলা যায়। তবে যদি সবচেয়ে বড় আক্ষেপের কথা বলতে হয়, বিশেষত, নির্বাচনকে সামনে রেখে, তাহলে বলতে হয়য় যে আমি চেয়েছিলাম এই দেশে যেভাবে সরকার বেছে নেওয়া হয়, সেই প্রক্রিয়াটিকে বদলে দিতে। বিষয়টা এমন করতে চেয়েছিলাম যেখানে একই ব্যালটেই মানুষ বলে দিতে পারবে তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পছন্দ কারা।'

ক্ষমতাসীন দলের নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্ট স্থগিত

এ সপ্তাহে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির জাতীয় নির্বাহী সদস্যরা বৈঠকে বসবেন। তারা দলের নেতৃত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। খুব সম্ভবত বুধবারের পূর্বনির্ধারিত জাতীয় সম্মেলনের (ককাস) পর এই বৈঠক আয়োজিত হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন নেতা বেছে নেওয়ার জন্য দল যাতে যথেষ্ঠ সময় পায়, সে জন্যই পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

chrystia_freeland.jpg
কানাডার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

সম্ভাব্য বিকল্পদের মধ্যে আছেন ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ব্যাংক অব কানাডা, উভয়ের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি। পাশাপাশি, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডও আছেন বিবেচনায়।

মন্ত্রিসভা থেকে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের আকস্মিক পদত্যাগকে বিশ্লেষকরা ট্রুডোর পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কানাডার পণ্য আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ট্রুডোর সঙ্গে মতভেদের জেরে তিনি পদত্যাগ করেন। এতে ট্রুডো বেশ বেকায়দায় পড়ে যান। এর পর মন্ত্রিসভায় বড় আকারে রদবদল করেও শেষরক্ষা হয়নি তার।

অক্টোবরের আগেই পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন

২০ অক্টোবরের আগে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যাশা, এই সময়সীমার আগেই নতুন নেতা দলের হাল ধরবেন এবং লিবারেল পার্টিকে সব ধরনের বিতর্ক ও কেলেঙ্কারি থেকে বের করে নিয়ে আসবেন।

বর্তমান জনমত জরিপে ট্রুডোর দল কট্টর নেতা পিয়েরে পোইলিয়েভরের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে। জাতীয় জরিপে গড়ে ২০ পয়েন্ট এগিয়ে আছে পিয়েরের দল।

pierre
কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সোমবার পদত্যাগের সময় ট্রুডো বলেন, 'পরবর্তী নির্বাচনের জন্য দেশবাসীর সামনে একজন গ্রহণযোগ্য প্রার্থী থাকা উচিত। আমার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে আমাকে যদি (দলের) অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়, তাহলে নিসন্দেহে আমি ওই নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত প্রার্থী নই।'

সোমবার ট্রুডো দাবি করেন, পিয়েরের কনজারভেটিভ দলের দৃষ্টিভঙ্গি 'কানাডীয়দের জন্য মঙ্গলজনক নয়'।

'জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই থামানোর কোনো অর্থ হয় না। কানাডার জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে মূল্যবোধ, শক্তিমত্তা ও বৈচিত্র্য রয়েছে, তা সব সময় দেশটিকে একতাবদ্ধ করেছে এবং এই ধারা থেকে সরে আসা দেশের জন্য সঠিক পথ নয়। সাংবাদিকদের ওপর হামলা কাম্য নয়। আমরা চাই ভবিষ্যতে নিয়ে উচ্চাভিলাষী, ইতিবাচক চিন্তাধারা—পিয়েরে পোইলিয়েভরে এ মুহূর্তে আমাদেরকে এরকম কিছু দিচ্ছেন না।'