মোটরসাইকেলে ভ্রমণের জন্য দেশের চমৎকার ৫ সড়ক
আমাদের দেশের হাইওয়েগুলো খুব আহামরি না হলেও, যারা মোটরসাইকেল নিয়ে ভ্রমণে বের হতে চান, তাদের জন্য দেশেই রয়েছে মনোমুগ্ধকর কিছু সড়ক। ধানখেত ঘেঁষা রাস্তা থেকে শুরু করে উপকূলীয় কিংবা পাহাড়ি রাস্তা - অনিন্দ্য সুন্দর কিছু সড়কের সন্ধান পাবেন খুঁজলেই।
ভ্লগার মির্জা আবিদুর রহমান মোটরসাইকেলে এসব সড়কে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন আমাদের। আপনার পরবর্তী মোটরসাইকেল ভ্রমণের জন্য দেশের পাঁচটি সড়কের কথা জানাব আজ।
কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ
শুরু করা যাক সবচেয়ে জনপ্রিয় সড়কটি দিয়ে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট কক্সবাজার থেকে শুরু হয়ে এই ৮০ কিলোমিটার সড়কটি উত্তরদিকে বিস্তৃত হয়েছে। এই রাস্তায় যাত্রার সময় একপাশে দেখা যাবে দিগন্ত বিস্তৃত সুবিশাল বঙ্গোপসাগরের নীলাভ পানি।
আর অন্য পাশে আছে সারি সারি পাহাড়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সাগর আর পাহাড়ের অপূর্ব মেলবন্ধনে রাস্তাটি হয়ে হয়ে উঠেছে সবার প্রিয়। মোটরসাইকেলে ভ্রমণের সঙ্গে বাংলাদেশের অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে চাইলে চলে যেতে পারেন এখানে।
সিন্দুকছড়ি-মহালছড়ি সড়ক
এরপর মির্জা আবিদুর রহমান জানালেন দ্বিতীয় গন্তব্যস্থলের সন্ধান। আর তা হলো সিন্দুকছড়ি-মহালছড়ি সড়ক। যদিও সড়কটি রামগড়ের জালিয়াপাড়া বাজারে শুরু হয়েছে, তবে স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকদের কাছে এটি সিন্দুকছড়ি রাস্তা হিসেবেই পরিচিত। এই সড়কটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত খাগড়াছড়ি জেলায় অবস্থিত। সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার। সম্প্রতি সড়কটি এর অপূর্ব সৌন্দর্যের জন্য 'বাংলাদেশের লাদাখ' উপাধি পেয়েছে।
জালিয়াপাড়া থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপনি দেখতে পাবেন পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। এরপর আপনি যতই সামনে এগিয়ে যাবেন মনে হবে জায়গাটি যেন কোনো প্রাকৃতিক রোলার কোস্টার। সড়কটির বাঁকে বাঁকে রয়েছে এডভেঞ্চারের ছোঁয়া। চারপাশে রয়েছে সবুজ চা বাগান, ফলের বাগান আর যত দূর চোখ যায় পাহাড় আর পাহাড়। তবে বর্ষাকালে সড়কটিতে ভ্রমণ না করাই ভালো।
মানিকছড়ি-কাপ্তাই
মোটরসাইকেল ভ্রমণের জন্য খাগড়াছড়ির মধ্যেই আমরা আরেকটি সড়কের খোঁজ দেবো, যা অনেকেরই অজানা। সেই সড়কটি মানিকছড়ি-কাপ্তাই সড়ক। মানিকছড়ির পাশে অবস্থিত আসাম বস্তি থেকে আপনার যাত্রা শুরু করে কাপ্তাই লেক ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যান। ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে একদিকে দেখবেন লেকের শান্ত পানি, আর অন্যদিকে পাহাড়ের সমারোহ।
সড়কটিকে বাস, ট্রাকের মত তেমন ভারী যানবাহন দেখা যায় না, শুধু গাড়ি এবং কিছু 'চান্দের গাড়ি' দেখা যায় এখানে। তাই মোটরসাইকেল ভ্রমণের জন্য এটি একেবারে উপযুক্ত একটি রাস্তা। এখানে গেলে বিখ্যাত হাতির চা খেতে ভুলবেন না যেন। এই ঝাল মরিচ চা রুটির সঙ্গে খাওয়া হয়। সকালের নাস্তা হিসেবে এটি খেতে পারেন এখানে।
মির্জা আবিদুর রহমান একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন। রাস্তাটি জঙ্গল থেকে কাছে হওয়ায় অনেক সময় এখানে হাতি চলাচল করে। তাই এই সড়কে যাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং রাতে এই রাস্তায় না যাওয়াই ভালো।
চলন বিল সড়ক
এখন কথা বলব উত্তরের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলন বিল সড়ক নিয়ে। ঢাকা থেকে শুরু করে হাটিকুমরুল হাইওয়ে ধরে এগিয়ে যেতে হবে ঢাকা- নাটোর হাইওয়ের দিকে। হাটিকুমরুল হাইওয়েটি সিরাজগঞ্জ রোড নামেও পরিচিত। উত্তরের সবচেয়ে সুন্দর এই সড়ক ধরে ২৫ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই পৌঁছে যাবেন মহিষলুটি বাজারে।
এখান থেকে ডানে গেলেই অপূর্ব সুন্দর একটি রাস্তা চোখে পড়বে। এই সরু রাস্তার দুই পাশে দেখা মিলবে চলন বিলের স্বচ্ছ অবারিত জলরাশি। দিগন্তে গাছগাছালির সারি এই প্রাকৃতিক দৃশ্যকে অনন্য মাত্রা দিয়েছে।
এখানে গেলে এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে, এই সড়কের কিছু অংশ পানির নিচে, যা আপনার যাত্রাকে আরও চ্যালেঞ্জিং ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। মির্জা আবিদুর রহমানের মতে বর্ষাকালে চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হয় অপার্থিব সৌন্দর্য। তবে সেই সময় বাড়তি সতর্ক হওয়া উচিত।
তামাবিল-ভোমরা
সবশেষে যেই সড়কটি নিয়ে কথা বলব সেটি লম্বা ভ্রমণের জন্য বিখ্যাত, আর তা হলো তামাবিল থেকে ভোমরা ৫০০ কিলোমিটার সুদীর্ঘ সড়ক। উত্তর-পূর্ব সিলেটের তামাবিলে বাংলাদেশের শেষ বাড়ি বলে পরিচিত জায়গা থেকে শুরু করে এগিয়ে যেতে হবে হবিগঞ্জ, নরসিংদী হয়ে ঢাকা পর্যন্ত। দক্ষিণের দিকে যাওয়ার জন্য মাওয়া অথবা পাটুরিয়া ঘাট হয়ে নদী পার হতে হবে। মাগুরা, যশোর হয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন আপনার গন্তব্যস্থল ভোমরা বর্ডারে, যা দক্ষিণ- পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এই যাত্রায় সুবিশাল পাহাড় থেকে শুরু করে ম্যানগ্রোভ বন সবকিছুই দেখার সুযোগ পাবেন।
এই ভ্রমণের উদ্দেশ্য কেবল গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো নয়। দেশ ও দেশের সংস্কৃতিকে নতুন করে আবিষ্কারের একটি বিশেষ মাধ্যম এটি।
অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম




Comments