করোনার সংক্রমণ রোধে পরীক্ষা ও টিকা কার্যক্রম বাড়াতে হবে

দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৩১ জন মারা গেছেন এবং ১৩ হাজার ৫০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

দেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৩১ জন মারা গেছেন এবং ১৩ হাজার ৫০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, অনেকেই পরীক্ষা করায় না বলে শনাক্তের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হবে। এটা স্পষ্ট ভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের প্রচেষ্টার অভাব, স্বাস্থ্য নির্দেশনা মানতে মানুষের অনীহা এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন হাসপাতালের মোট নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) শয্যার ২৪ শতাংশে এখন রোগী ভর্তি আছে, যা গত ১ জানুয়ারি থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। একই সময়ের তুলনায় হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) মোট শয্যার ১০ শতাংশ রোগীর জায়গায় এখন ২৭ শতাংশ শয্যায় রোগী আছে। সুতরাং, আমরা যদি এখনই সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের হাসপাতালগুলো শিগগিরই রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাবে।

এ কথা অবশ্যই বলা যায়, সরকারের নেওয়া ব্যবস্থাগুলো যথেষ্ট ছিল না এবং কিছু ক্ষেত্রে সুচিন্তিতও ছিল না। সরকার জানুয়ারির শুরুতে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে। এর মধ্যে ছিল- মাস্ক পরা, গণজমায়েত সীমিত করা ও সব ধরনের বড় অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ রাখা। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিছু কিছু বিষয় পরস্পরবিরোধীও ছিল। যেমন, সরকার জনগণকে জনসমাগম এড়াতে বললেও, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা চলেছে, সব শপিং মল ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোও খোলা ছিল। স্কুলগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলেও, সব ধরনের জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে সরকারও সাধারণ মানুষের মতো করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে যতটা গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত ছিল, তা নেয়নি। সম্ভবত এর প্রভাব মারাত্মক না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু, এক্ষেত্রে সরকারের দূরদৃষ্টির যে অভাব দেখা গেছে তার পরিণতি খুবই ভয়াবহ।

এ সময়ে এসে দেরিতে হলেও করোনা সংক্রমণের দ্রুত বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা সব বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর করা এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। বাড়ির বাইরে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিত। স্থানীয় নির্বাচনসহ যে কোনো ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করার পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে, করোনা সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানতে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। এটা আমাদের সঠিক প্রস্তুতি ও যথাযথ পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করবে। বাসায় যেন করোনা পরীক্ষা যায়, এজন্য হোম টেস্ট কিট সহজলভ্য করার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আরও বেশি মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে সরকারকে টিকাদান কার্যক্রমের পরিধি ও গতি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যাদের টিকা পাওয়ার কথা, যত শিগগির সম্ভব তাদের টিকা দেওয়ারও ব্যবস্থা করতে হবে।