বিধিনিষেধ যথাযথভাবে কার্যকর করুন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বেশকিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। আগামীকাল ১৩ জানুয়ারি থেকে সেগুলো কার্যকর হবে। এটি অপ্রত্যাশিত ছিল না এবং হটাৎ করেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বেশকিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। আগামীকাল ১৩ জানুয়ারি থেকে সেগুলো কার্যকর হবে। এটি অপ্রত্যাশিত ছিল না এবং হটাৎ করেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে মহামারির তৃতীয় ঢেউ চলে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা গেল না। তবে বিধিনিষেধ যথাযথভাবে কার্যকর করা গেলে আশা করা যায় যে লকডাউনের প্রয়োজন পড়বে না এবং ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াবহ পরিণতি এড়ানো যাবে।

করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট অতি সংক্রমণযোগ্য হওয়ায় আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বেশিরভাগ অংশে এই ভ্যারিয়েন্ট দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তবে এটি সহজেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিতে পারলেও অতটা মারণঘাতী নয় বলে জানা গেছে।

অন্যভাবে বলতে গেলে, এই ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে এতে মৃত্যুর হার আগের মতো বেশি নাও হতে পারে।

নতুন ভ্যারিয়েন্ট মোকাবিলা করতে আমাদের ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হবে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে গত ২ বছরের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এর বিস্তার বন্ধ করার চেয়ে ভালো উপায় আর নেই। ব্যক্তিগতভাবে ও সমষ্টিগতভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই তা সম্ভব।

যতটা সম্ভব বাড়িতে অবস্থান করা উচিত, যে কোনো ধরনের গণজমায়েত এড়ানো এবং অবশ্যই টিকা নেওয়া উচিত।

যা হোক, যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলোর ব্যাপকতা থাকলেও, আমরা মনে করি কয়েকটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত। ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক সমাবেশ 'উন্মুক্ত স্থানে' বন্ধ করা হয়েছে।

আমরা কি বুঝে নেব, আবদ্ধ জায়গায় এই ধরনের জমায়েত আয়োজন করা যেতে পারে? বিভিন্ন ধরনের জমায়েত আবদ্ধ জায়গার চেয়ে খোলা জায়গায় বেশি নিরাপদ। আবদ্ধ জায়গায় বায়ুপ্রবাহ বন্ধ থাকে এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ভাইরাসের বিস্তার ঘটাতে সহায়তা করে।

অন্যদিকে শপিং মল, দোকান ও বড় বাজারগুলোর বিষয়ে এমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। স্বাভাবিক ব্যবসায়িক সময় অনুযায়ী এগুলো চলবে। আমরা বিশ্বাস করি যে বড় শপিং মলগুলোর জন্য কিছু বিধিনিষেধের প্রয়োজন আছে।

অভিজ্ঞতা বলে, এই বিধিনিষেধগুলো কখনও পুরোপুরি প্রয়োগ করা হয় না। বিধিবিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে সবচেয়ে খারাপ চিত্র পরিবহন খাতের। বিধিনিষেধ চলাকালেও আমরা পূর্ণ যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলতে ও বেশি ভাড়া নিতে দেখেছি।

আমরা জেনে আরও আশ্চর্য হয়েছি যে ১৫ তারিখের পর ১২ বা এর বেশি বয়সী কোনো শিক্ষার্থী টিকা না নিয়ে থাকলে সশরীরে ক্লাসে যেতে পারবে না। রেস্তোরাঁয় খেতে অবশ্যই ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই ২টি নির্দেশনা যথাযথ হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৩৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী পূর্ণ ২ ডোজ টিকা পেয়েছে। এটা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ। এ ধরনের নির্দেশনা তখনই যথাযথ হবে যখন দেশের সব জনগণকে পূর্ণ ২ ডোজ টিকা দেওয়া সম্পন্ন হবে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

বিধিনিষেধ তখনই কার্যকর হয়, যখন সেগুলো মেনে চলা হয়। প্রশাসনের শুধু আদেশ জারি করে বসে থাকা উচিত নয়। আদেশের প্রয়োগ নিশ্চিত করাও কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ।