মানিকদা লিখলেন, খবরদার তুই মোটা হবি না, পান্তাভাতও খাবি না: ববিতা

জাহিদ আকবর
জাহিদ আকবর
2 May 2021, 15:49 PM
UPDATED 2 May 2021, 21:53 PM
আজ শতবর্ষে পড়লেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক ও লেখক। ১৯২১ সালের আজকের দিনে রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

আজ শতবর্ষে পড়লেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। তিনি একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক ও লেখক। ১৯২১ সালের আজকের দিনে রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

বাবা সুকুমার রায় এবং পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী দুজনেই বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। ২০০৪ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় ১৩তম স্থান লাভ করেছিলেন তিনি। তার ‘পথের পাঁচালী’ মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে।

সত্যজিৎ রায়ের উল্লেখযোগ্য নির্মাণের মধ্যে রয়েছে- ‘তিন কন্যা’ (১৯৬১), ‘চারুলতা’ (১৯৬৪), ‘নায়ক’ (১৯৬৬), ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ (১৯৭০), ‘আশনি সংকেত’ (১৯৭৩) ‘সীমাবদ্ধ’ (১৯৭১) ও ‘জন অরণ্য’ (১৯৭৫) ‘গণশত্রু’ (১৯৮৯), ‘শাখাপ্রশাখা’ (১৯৯০) ও ‘আগন্তুক’ (১৯৯১)। ১৯৭৭ সালে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ নামের হিন্দি সিনেমা নির্মাণ করেন। সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি গোয়েন্দা চরিত্র ‘ফেলুদা’ ও ‘প্রফেসর শঙ্কু’। তার তৈরি দুটি মিউজিক্যাল ছবি ‘গুগা বাবা’, ‘হীরক রাজার দেশে’ বাংলা সিনেমায় দুটি হীরক খণ্ড বিশেষ।

১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল এই খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা মৃত্যুবরণ করেন।

বরেণ্য নির্মাতা সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় অভিনয় করে আন্তর্জাতিক অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান বাংলাদেশের খ্যাতিমান অভিনেত্রী ববিতা। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি। সাত বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত অভিনেত্রী ববিতা আজ রোববার দুপুরে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম শতবর্ষে কথা বললেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

অশনি সংকেত সিনেমার শুটিং শেষ হবার পরও আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হতো মানিকদার সঙ্গে। চিঠিতেই বেশি যোগাযোগ হতো আমাদের। একবার আমি তাকে লিখলাম, ‘এখানকার পরিচালকরা আমাকে মোটা হতে বলেছেন। তাই আমি নিয়মিত পান্তাভাত খাওয়া শুরু করেছি।’ মানিকদা চিঠির উত্তরে লিখলেন, ‘তুই মোটা হবি না। যেমন আছিস তেমনই থাক। খবরদার তুই পান্তাভাত খাবি না।’

‘অশনি সংকেত’ সিনেমার শুটিংয়ের সময় ঈদ পড়েছিল তখন। তখন আমার খুব মন খারাপ। সবাইকে ছেড়ে একা একা আছি। মানিকদা বিষয়টা বুঝতে পেরে আমার জন্য অনেক কিছু রান্না করালেন। তারাবাতি, আতশবাজি ফোটানো হলো। মনের কথা বুঝতে পারতেন।

যতোবারই কলকাতা গিয়েছি, মানিকদার জন্য ইলিশ মাছ আর চিংড়ি নিয়ে গিয়েছি। খুব পছন্দ করতেন তিনি। সব ভুলে গেলেও ইলিশ মাছ নিয়ে যেতে ভুলিনি। দিল্লি-মুম্বাইয়ে যেখানেই কাজ থাকুক, তার বাসায় গিয়েছি, দেখা করেছি, তারপর অন্য কাজে গিয়েছি।

‘অশনি সংকেত’ সিনেমাটা মুক্তির পর আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পেয়ে গেলাম। বলিউড থেকে অভিনয়ের বিষয়ে ভালো ভালো প্রস্তাব এসেছিল মানিকদার মাধ্যমে। তারা বাংলাদেশেও এসেছিলেন আমার সঙ্গে মিটিং করার জন্য। তাদের বিনয়ের সঙ্গে বলেছিলাম, ‘এখন বলিউডে গিয়ে সিনেমা করতে পারব না। তার কারণ ছিল, সেই সময় সুচন্দা আপা জহির ভাইয়ের (জহির রায়হান) বিষয়ে অস্থির ছিলেন। এমন একটা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন। সেই কারণ ছাড়াও বলিউডে সিনেমা করতে রাজি হইনি। দেশের সিনেমার প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা।

মানিকদার কারণে বিশ্বের নামীদামী ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সেইসব অনুষ্ঠানে ‘অশনি সংকেত’ সিনেমাটি প্রদর্শিত হয়েছে। আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক, বোদ্ধারা। এটা কয়জনের ভাগ্যে জোটে। নিউইয়র্ক টাইমস, লন্ডন ও জার্মানির বিখ্যাত নামীদামী পত্রিকার প্রচ্ছদে আমি এসেছি সেই সময়ে। বার্লিন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভালে নিমন্ত্রিত হয়েছি। সেখানে ‘গোল্ডেন বিয়ার’ দেওয়া হয়েছিল সিনেমাটিকে। রাশিয়াতে রাস্তায় রাস্তায় আমার ছবি বিলবোর্ডে দেখেছি। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমন্ত্রিত হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে অনেকবার গেছি।

সত্যজিৎ রায়কে দিয়ে বাংলাদেশের একটি ছবি পরিচালনা করানোর খুব ইচ্ছা আমার মনের গভীরে ছিল। কথাও বলেছিলাম মানিকদার সঙ্গে। তারপর তো মানিকদা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আমার ইচ্ছাটা আর পূরণ হলো না।

অশনি সংকেত সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব যখন এসেছিল, তখন আমরা পুরান ঢাকায় থাকতাম। বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছি মাত্র। একদিন আমাদের সেই বাসায় একটি চিঠি এলো। চিঠির বিষয় ছিল সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করা নিয়ে। প্রথমে ভেবেছিলাম কেউ মজা করেছে। পরে বরেণ্য এই পরিচালকের সঙ্গে সিনেমায় অভিনয়ের বিষয়ে কথা বলতে ভারতে গিয়েছিলাম।

তখন আমার বয়স ষোল সতেরো বছর বয়স। আমি আর সুচন্দা আপা কলকাতা গিয়েছিলাম সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা করতে। এমন অনেক অনেক কথা-স্মৃতি কয়েকদিন থেকে শুধুই মনে পড়ছে।